পরিবর্তনের গল্প
গনেশ বললো, “তোমাদের সেক্রেটারি কে?”
লোকটি বললো, “যেই হোক, বৃষ্টি হলে পাঁচ টাকা
বেশী দিতে হবে |”
এইবার গনেশ রেগে গিয়ে হাত নেড়ে নেড়ে বলে,
“কেন? বৃষ্টি হলে কী তোমাদের খিদে বেশী পায়? আমার সময় নষ্ট করো না তো| এই নাও ১০
টাকা |”
কথা কাটাকাটির আওয়াজ শুনে চারপাশ থেকে আরও
কয়েকটা রিক্সাওয়ালা জড়ো হলো| তাদের মধ্যে বয়সে বড় একটা রিক্সাওয়ালা কাছে এসে বলে,
“কী রে হরা, বাবুর সাথে ঝগড়া করছিস কেন?”
হরা ওরফে হরেন বললো, “এই দেখো না পরানকাকা,
এই লোকটা হসপিটাল থেকে মোড় পর্যন্ত এসে ১০ টাকা দেবে বলছে| এমনিতেই ভাড়া ১২ টাকা,
আর বৃষ্টি পড়ছে বলে আরো ৩ টাকা বেশী চাইছি বলে বাবুর কী রাগ|”
এইবার পরান তাকালো গনেশের দিকে, “কী আর
করবেন বাবু| বুঝতেই পারছেন, বৃষ্টিতে এমনিতেই কেউ রিক্সা আনতে চায় না| ১৫ টাকা
চাইছে দিয়েই দিন না|”
“এই শুনুন, এমন কিছু বৃষ্টি পড়েনি| সেরকম
বৃষ্টি পড়লে আপনারা রাস্তায় দাড়িয়ে ঝামেলা বাড়াতেন না| কী করবেন কী টাকা না দিলে?
এই আমি চললাম|” , পরানের দিকে আঙ্গুল তুলে কথাগুলো বললো গনেশ|
এইবার পরিস্থিতি একটু ভারী হয়ে গেল|
রিক্সাওয়ালাদের ভিড় আরেকটু বেড়ে গেলো| তারই মাঝে ছোকরা গোছের একজন বলে উঠলো,
“দেখুন, এখন আর ঐসব বলে কোনো কাজ হবে না| সব বদলে গেছে| পাড়ায় শান্তিতে থাকতে
চাইলে সবাইকেই খুশি করতে হবে| এখন চুপচাপ পাঁচটা টাকা হরাকে দিয়ে দিন|”
এই কথায় একটু ভয় পেলো গনেশ| পকেট থেকে পাঁচ
টাকা বের করে দিয়ে দিলো আর মনে মনে ভাবলো, “সত্যি সব কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে|”
আজ থেকে ১০ বছর আগে নামী কলেজ থেকে
ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে বিদেশে বড় কোম্পানিতে কাজ করতে চলে যায় গনেশ সরকার| তারপর
থেকে ওখানেই মোটামুটি পাকাপাকি ভাবে থাকতে শুরু করে দেয় সে| দেশে খুব কম-ই আসতো
গনেশ| প্রয়োজন পড়লে তবেই আসত, নয়তো নয়| তাই ওর পুরনো সমাজে যে কী পরিবর্তন এসেছে
তা সম্বন্ধে কোনো ধারনাই ছিল না ওর| বিয়ে-থাওয়া করেনি গনেশ| বাবা অনেকদিন আগেই গত
হয়েছেন| কলকাতার ঘরে আপনজন বলতে শুধু মা, ছোটভাই আর বৌদি|
গনেশের মায়ের আচমকা খুব শরীর খারাপ| তাই খবর
পেয়েই সুদুর আমেরিকা থেকে পাড়ি দিয়ে এসেছে নিজের শহরে| গতকাল সকালে মাকে হাসপাতালে
ভর্তি করিয়েছে গনেশ আর এর মধ্যে বুঝতে পেরে গেছে ওর সেই চেনা ১০ বছর আগের সমাজটা
বদলে গেছে|
ঘরে এসে মুখ হাত পা ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো
গনেশ| ভাই আর বৌদি হাসপাতালে আছে, ঘরে এখন আছে শুধু কাজের মেয়ে মীনা| সেই কোন
সকালে খেয়ে বেরিয়েছে গনেশ, মাঝখানে পেটে আর কিছু পড়েনি| তাই ঘরে ঢুকতেই ঢুকতেই
মীনাকে গনেশ বলে দিয়েছে খাবার রেডি করতে|
বাথরুম থেকেই বেরিয়েই মীনার গলার আওয়াজ পেলো
গনেশ, “দাদাবাবু, খাবার গরম হয়ে গেছে| খেয়ে নিন|”
“ঠিক আছে তুমি টেবিলে খাবার বেড়ে রাখো আমি
আসছি|”- শোবার ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো গনেশ|
“খাবার তো আপনাকে নিজে নিয়ে নিতে হবে
দাদাবাবু, আমাকে শুধু খাবার রান্ধার জন্য পয়সা দেয়| খাবার দেবার জন্য তো দেয়
না!”- নামী একটা চ্যানেলে রোমাঞ্চকর সিরিয়াল হচ্ছিলো| টিভির পর্দা থেকে চোখ না
তুলেই জবাব দিলো মীনা|
“মানেটা কী? খাবারটা একটু দিয়ে দিতে গেলে কী
তোমার বেশী পরিশ্রম হয়? একেই ঘরে তো এই অবস্থা, তার মাঝে তুমি বেশী ঝামেলা করো
নাতো| খুজলে অনেক কাজের লোক পাওয়া যাবে| ভাত ছড়ালে কী আর কাকের অভাব হয়?”- চেঁচিয়ে
চেঁচিয়ে বলতে শুরু করলো গনেশ|
“দেখুন দাদাবাবু, রাগ করবেন না| আমি কিন্তু
সকাল থেকেই আজ আপনাদের ঘরেই আছি| অনেক্ষণ আগেই আমার চলে যাওয়ার কথা! আমি যে আজ
বেশী সময় আছি না, এরকম কেউ থাকবে না|”- বলতে বলতে গজগজ করে ঘর থেকে বরিয়ে গেলো সে|
“হুঃ, আজকালকার কাজের লোকদের মধ্যে মিনিমাম
ভদ্রতাটুকুও নেই| ছোটবেলায় দেখতাম কাজের মাসিটাকে মা কত কথা শুনাতো, কীন্তু কাজের
মাসি কিছু বলতো না|”- মনে মনে ভাবলো গনেশ|
ডাইনিং টেবিলে বসে নিজেই খাবার নিয়ে খেয়ে
নিলো গনেশ| তারপর ভিতর ঘরে গিয়ে লম্বা হয়ে গেলো, সারাদিনের পরিশ্রমের পর বিছানায়
পিঠ পড়তেই ঘুম চলে এলো গনেশের|
ঘুম
ভাঙ্গলো সকাল সাড়ে সাতটায় ভাইয়ের ফোনে| ভাই আর বৌদি কয়েকদিনের জন্য হাসপাতালের
সামনে একটা ঘর ভাড়া করে আছে| সেখান থেকেই ফোন করছে পরেশ, গনেশের ভাই|
ফোনে গনেশ জানতে পারলো যে মায়ের অবস্থা একটু
সিরিযাস হয়ে গেছে, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হচ্ছে| ভাই গনেশকে বলেছে তাড়াতাড়ি টাকা
নিয়ে হসপিটালে পৌছাতে, ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত কিনতে হবে|
ভাইয়ের ফোন পেয়েই গনেশ ছুটলো হাসপাতালে|
টাকাটা হাতে নিয়ে ব্লাড ব্যাঙ্কের লম্বা লাইনের পিছনে দাড়ালো ও|
মিনিট দশেক পরেই একটি লোক এলো গনেশের কাছে|
ততক্ষণে লাইনটা গনেশের পিছনেও অনেকটা বেড়ে গেছে, তবে গনেশ কিন্তু কাউন্টার থেকে
একইরকম দুরেই রয়ে গেছে|
“কী দাদা, লাইনের যা অবস্থা দেখছি, তাতে কাল
ভোরের আগে রক্ত পাবেন না মনে হচ্ছে!কার চাই রক্ত? আপনার মা-এর না? ”-গনেশের কাঁধে
হাট রেখে বিজ্ঞের মতো বললো লোকটা|
“আপনি? আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না!”- খানিকটা
থতমত খেয়ে গনেশ জিগেশ করলো|
“ছ্যা, আমাকে এই হসপিটালের মোটামুটি সবাই
চেনে| এই রক্ত নিতে লোকজনকে সাহায্য করি|”-কথাগুলো বলে অদ্ভুত ভঙ্গি করলো লোকটা|
“মানে? বুঝলাম না!”-বেশ আগ্রহের সঙ্গে
লোকটার কাছে একটু ঝুঁকে গেলো গনেশ|
“মানেটা খুব সহজ| ওই কাউন্টারে রক্তের দাম
১০০ টাকা এক বোতল| আপনি আমাকে ২০০ দেবেন, আমি ২০ মিনিটের মধ্যে নিয়ে চলে আসবো|
বুঝলেন?”-একটা বিজ্ঞের হাসি হেসে লোকটা তাকালো গনেশের দিকে|
“হ্যা বুঝলাম, আর এও বুঝলাম যে আপনার মতো
লোভী দালালদের জন্যই দেশটা উচ্ছন্নে যাচ্ছে| জানেন এখানে কত গরিব লোক রক্তের জন্য
আসে| আর আপনি তাদের ঘাড় ভেঙ্গে টাকা আদায় করেন? লজ্জা লাগে না আপনার?”-লোকটার দিকে
কটমট করে তাকিয়ে বললো গনেশ|
“আরে
দেখুন বেশ বড় বড় তো কথা বললেন, এই চিনের পাঁচিল পেরোতে যখন জান কয়লা হয়ে যাবে আর
কাউন্টারে গিয়েও নানা ফ্যাংড়ার জন্য রক্ত পাবেন না, তখন বুঝবেন কে গরিব আর কে
বড়লোক!”- হাত নাড়তে নাড়তে বলে চললো লোকটা|
“এই আপনি যান তো, সকাল সকাল মাথা গরম করবেন
না বলে দিছি| কেটে পড়ুন এখান থেকে তাড়াতাড়ি|”-বেশ রেগে গেলো এবার গনেশ|
একটা মিচকে হাসি হেসে লোকটা যেনো ভিড়ের
মধ্যে মিলিয়ে গেলো|
যাই হোক, রক্ত নেবার লাইনটা ধীরে হলেও
কাউন্টারের দিকে এগোচ্ছে| দেখে সামান্য স্বস্তি পেলো গনেশ| এরই মধ্যে আবে ভাইয়ের
ফোন এলো গনেশের কাছে| মায়ের অবস্থার অবনতি হচ্ছে, রক্ত খুব তাড়াতাড়ি চাই| আবার
এদিকে লাইনটাও মাঝখানে আবার থেমে গেছে| কাউন্টারের লোকটার সাথে কার একজনের প্রচন্ড
তর্ক হচ্ছে| লাইনে দাড়িয়ে উসখুস করতে শুরু করলো গনেশ|
এই সময় তার আবার মনে পরলো সেই লোকটার
কথা-“সত্যি কী তাড়াতাড়ি রক্ত এনে দিতে পারবে লোকটা? দেখবো নাকি? কিন্তু লোকটাকে
যেরকম মুখঝামটা দিয়েছি, তাতে কী দেবে রক্ত| দেখি একবার চেষ্টা করতে ক্ষতি কী?”
এরকম নানা সাত পাঁচ ভেবে শেষ পর্যন্ত ওই
লোকটাকেই খুঁজে বের করে অনেক হাতেপায়ে ধরে বেশী দাম দিয়ে রক্ত কিনতে হলো গনেশকে| পুরো
পরিস্থিতির কথা ভেবে গনেশ বেশ অবাক হয়ে যাচ্ছিলো| কিছুতেই দশ বছর আগের সেই সহজ সরল
সাদাসিধে পৃথিবীটার সাথে মিলিয়ে নিতে পারলো না সে| যত দেখছিলো ততই আশচর্য হয়ে
যাচ্ছিলো|
“যাকগে, মাকে তো ঠিক সময় রক্ত দেওয়া গেলো|
এখন আর ওসব ভেবে লাভ কী?”-এই ভেবে পুরো ব্যাপারটা মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইলো গনেশ|
গত
রাত্রের ওই ঘটনার পর আজকে আর কাজের লোকটাকে বেশিক্ষণ থাকতে বলেনি গনেশ| হোটেলে যা
হোক দুটো মুখে গুঁজে নিয়ে ঘরে ফিরতেই চক্ষু চড়কগাছ! ঘরের পুরো দরজা আগলে বড় একটা
বটগাছের গুড়ি পড়ে আছে|
“এটা আবার কোথেকে এলো?”-এই ভাবতে ভাবতে চারিদিক তাকাতেই গনেশ বুঝতে পারলো
যে সামনের বড় বটগাছটা কাটা হয়েছে আর বড় গুড়িটা ফেলার বা নিয়ে যাওয়ার জায়গা না পেয়ে
এখানেই ফেলে দিয়েছে|
“মানে কিরকম অসভ্য হেছে আজকালকার লোক|”-মনে
মনে প্রচন্ড খেপে গেলো গনেশ, “একে তো বিনা কারণে গাছ-টাছ কেটে ফেলছে তার ওপর
অন্যের অসুবিধে করে সেগুলো এধার-ওধার ফেলে দিছে|”
যাই
হোক, কোনরকমে ওই বড় গুড়িটা সরিয়ে ঘরে ঢুকলো গনেশ|
গনেশ পরেরদিন বেশ বেলা করে ঘুম থেকে উঠলো| ভাইকে বলে রেখেছিলো যে বেশ
কয়েকদিন ধরেই ভালো করে ঘুম হয়নি, সেইজন্য সকালে আর হাসপাতাল আসবে না-একেবারে
দুপুরেই যাবে| সেইমতো ১১ টা নাগাদ ঘুম থেকে উঠে সামনের রিন্টুর দোকান থেকে সামান্য
কিছু খেয়ে হাসপাতালের দিকে পা বাড়ালো গনেশ|
কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে সবকিছু দেখে শুনে মাথায় আগুন ধরে গেলো গনেশের| আজ
সকাল থেকে মায়ের অবস্থার ভালোরকম অবনতি হয়েছে| ডাক্তাররা প্রথমে কিছুই বলতে চায়নি|
পরে গনেশের ভাইয়ের অনেক পিড়াপিড়িতে সব কথা বেরিয়ে গেছে|
কলকাতার এক নামী বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি ছিল গনেশের মা| কিন্তু
দুর্ভাগ্যবশত ওখানকার ডাক্তাররা গনেশের মায়ের ভুল চিকিত্সা করে যাচ্ছিলেন আর সেটা
বুঝতে পারার পরেও গনেশের মাকে তাঁরা হাসপাতালে রেখে দিতে চাইছিলেন সুধু টাকার লোভে|
এমনিতেই এখনি চল্লিশ হাজারের মতো খরচা হয়ে গেছে|
এরপর হাসপাতালের অফিসঘরে গিয়ে গনেশ রীতিমত চিত্কার করতে শুরু করে দিলো|
গনেশের ভাই আর ভাইয়ের স্ত্রী মিলে গনেশকে বোঝাতে চেষ্টা করলো যে যা হওয়ার তো হয়ে
গেছে এখন মাকে অন্য কোনো হাসপাতালে ভর্তি করার কথা ভাবতে হবে|
পরিস্থিতি ঠান্ডা হওয়ার পর ঠিক হলো যে মাকে এম্বুলেন্স-এ করে অন্য একটা
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে| যথরীতি এম্বুলেন্স-এর ব্যবস্থা করা হলো আর যথারীতি
তাতেও অনেক ঝঞ্ঝাট পোয়াতে হলো|
এম্বুলেন্স-এ মায়ের সাথে যাচ্ছিলো গনেশ আর ওর ভাই| ভাইয়ের স্ত্রীও যেতে
চেয়েছিলো কিন্তু ঘর ফাঁকা বলে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে|
গাড়িতে যেতে যেতে গনেশ নিজের মনে ভাবতে থাকলো,
নিজের দেশে আসার পর কী ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে মাত্র এই তিন দিনেই| আর কত অভিজ্ঞতা
হবে তার কোনো ঠিক নেই| এদিকে মায়ের শরীর খারাপ, মন মেজাজও তেমন ভালো নেই|
অনেকক্ষণ পর গনেশ ওর ভাইকে জিগেস করলো, “হ্যা রে ভাই আমাদের দেশটায় অনেক
কিছু বদলে গেছে না?”
ভাই
ওর মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জিগেস করলো, “কিরকম দাদা?”
এরপর গনেশ ওর ভাইকে এক এক করে এদেশে আসার পর নিজের সব অভিজ্ঞতার কথা বললো| যেমনভাবে
ঘটনাগুলো ঘটেছে ঠিক সেইভাবেই|
এবারে মুখ খুললো ওর ভাই, “হ্যা রে ভাই সবকিছুই
পরিবর্তন হয়ে গেছে| এখন আর কোনো লোক-ই অপরের গোলাম হয়ে থকতে চায় না| সবাই নিজের
প্রাপ্য আদায় করতে শিখে গেছে| নিজের ওপর অন্যায় হলে কেউ এখন মুখ বুজে বসে থাকে না|
আর সবাই এখন সুযোগ সন্ধানী হয়ে গেছে| কী করে নিজের ফায়দা হয় সেই চিন্তাই তো লোকে
এখন সবসময় করে| অপরের জন্য চিন্তা কেউ করে না রে দাদা|”
“ঠিক তাই রে, কিন্তু আমাদের দেশটা তো এরকম ছিল না| সব তো বিদেশের কালচার| আধুনিক
হতে গিয়ে লোকে তো বিদেশের খারাপ জিনিসগুলো আয়ত্ত করে নিয়েছে|”-বেশ দুঃখ করে বললো
গনেশ|
এরই
মধ্যে আবার মায়ের অবস্থার অবনতি হতে লাগলো| বি.পি. কমে যেতে লাগলো হঠাত করে|
কিছুক্ষণ পরে নাড়ি খুঁজে পাও গেলো না| গনেশ আর ওর ভাইয়ের মুখ ছোট হয়ে গেলো| তবুও
শেষ আশা করে মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো| কিন্তু সেখানে ডাক্তাররা তাঁকে মৃত
ঘোষণা করে দিলেন|
ডুকরে কেঁদে উঠলো গনেশ| সেই নামী বেসরকারী হাসপাতালের
নাম করে বলতে লাগলো, “ওরাই আমার মাকে মেরে দিলো, ছাড়বো না ওদের| খুব খারাপ লোক
ওরা|”-পাগলের মতো বকতে লাগলো গনেশ| গনেশের ভাইয়ের প্রায় একই অবস্থা| আশেপাশের
লোকজন শেষ পর্যন্ত ওদের শান্ত করলো|
সেদিন ছিল গনেশের মায়ের শ্রাদ্ধ| স্বভবতই খুব ব্যস্ত ছিল গনেশ| কী একটা
জিনিস কেনার জন্য বাইরে বেরিয়েছিল ও| হঠাত করেই সেই রিকসাওয়ালাটার সাথে দেখা যার
সঙ্গে সেদিন কথা কাটাকাটি হয়েছিল গনেশের|
হারা তো গনেশকে দেখেই সামনের একপাটি দাঁত দেখিয়ে জিগেস করে, “শুনলাম মাসিমা
মারা গেলেন| কী হয়েছিল মাসিমার?”
কোনরকম পাত্তা না দিয়ে পাশ কাটিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছিলো গনেশ| কিন্তু থেমে গেলো
পরের কথায়|
হারা বলে উঠলো, “বাবু দেখছি এখনো আমার ওপর রাগ করে আছেন| যাই হোক, সেদিন ওই
ভারী জিনিসটা দরজার সামনে থেকে সরাতে সমস্যা হয় নি তো কোনো? ওই বট গাছের বড় গুড়িটা?”
পুরো থম মেরে গেলো গনেশ|
চারিদিকে সত্যি পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে|